পানিশ্বর ইউনিয়নের ইতিহাস
পানিশ্বরের তেমন কোন লিখিত ইতিহাস খুজেঁ পাওয়া যায়না। যতটুকু জানা যায়, মোঘল শাসনামলে বার ভূইয়াদেরকে প্রতিরোধের জন্য সরাইলের পশ্চিমে মেঘনা নদীতে বিশাল মোঘল বাহিনী নৌবহর নিয়ে অবস্থান নেয়। রাতে মোঘলবাহিনীর রণতরী গুলোতে জ্বলে উঠত অসংখ্য বাতি। আশপাশের এলাকার লোকজন দেখতেন রাতের আধারেঁ পানির উপর ভেসে আছে জ্বলমলে এক ভাসমান শহর। এ প্রেক্ষিতেই পানির শহর তথা পানিশ্বর নামকরণ হয়েছে।
তাছাড়া পানিশ্বর নামকরণের বিষয়ে লোকমুখে শোনা যায় এ এলাকাটি নিচুভূমি। এক সময় বছরের প্রায় সাত মাসই এ এলাকা পানির নিচে ডুবে থাকত। জলের সাথেই ছিল মানুষের বসবাস। এ কারনেই এ এলাকার পানিশ্বর নামকরণ হয়েছে। অন্য আরেকটি কথাও লোকমুখে চাওর রয়েছে যে, একসময় ত্রিপুরা রাজ্যের অর্ন্তভূক্ত এ সমস্ত এলাকা ছিল হিন্দু জমিদারদের অধীন। তখন পানিশ্বর এলাকায়ও প্রচুর হিন্দু লোক ছিল। হিন্দুদের দ্বারা এ এলাকার পানিশ্বর নামকরণটি হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। পানি এবং ইশ্বর শব্দ দু’টির সমন্বয়ে পানিশ্বর নামের উৎপত্তি বলে মনে করেন তারা। আবার হিন্দুরা যেহেতু পানিকে জল বলে ডাকে সেহেতু পানিশ্বর নামকরণটি হিন্দুদের দ্বারা হয়েছে বলে অনেকেই মানতে নারাজ। মেঘনা নদীর পূর্ব পাড়ের জলকন্যা পানিশ্বর এক সময় অত্র এলাকার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ছিল। সমস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, হবিগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল পানিশ্বর বাজারের সাথে। ধান, পাট এবং সরিষার পাইকারী বাজার ছিল পানিশ্বরে। মেঘনা নদীর বড় বড় মাছ পাওয়া যেত এখানে। পানিশ্বরের পশ্চিম পার্শ্বে মেঘনার পাড় ঘেষে ছিল হিন্দু সম্প্রদায়। যাদের প্রধান পেশা ছিল মাছ ধরা। আজ পানিশ্বরের এ সম্প্রদায়ের বাড়িঘর মেঘনার বুকে বিলীন হয়ে গেছে। দু’একটি পরিবার নদীর বুকে বিলীন হতে হতে অসহায়ভাবে টিকে আছে। কিশোরগঞ্জের ধান সমৃদ্ধ মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের উত্তরাংশ, নাসিরনগর সহ হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার সাথে নদী পথে পানিশ্বরের যোগাযোগ অত্যন্ত সহজ। ফলে প্রায় সারা বছরই ঐ সমস্ত এলাকা থেকে প্রচুর ধান আসে পানিশ্বর বাজারে। যার ফলে এখানে গড়ে উঠেছে প্রচুর ধানের চাতাল তথা ব্রয়লার রাইস মিল। বর্তমানে এ সকল চাতালের মালিকেরা জেলার অন্যান্য উপজোয়ও এ ব্যবসাকে প্রসারিত করেছে। এক সময় এখানে প্রচুর মিষ্টি আলু উৎপন্ন হতো। তাছাড়া পাট, সরিষা এবং রবি শস্যও উৎপাদন হতো । তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নৌ-পথ। শুকনো মৌসুমে মানুষের পায়ে হেটে চলা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা। বলতে তখন পায়ে হেটে চলার তেমন কোন রাস্তাও ছিলনা। এতদসত্বও এখানে গড়ে উঠেছে দু’টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার আলো অত্র ইউনিয়নের সর্বত্র শিক্ষার আলো সমানভাবে ছড়াতে পারেনি যোগাযোগ ব্যবস্তার কারণে। অনেকেই এসকল কারণে শহরমুখো হয়েছে। তবে বর্তমানে কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি পানিশ্বর থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পর্যন্ত পাঁকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এ এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নাগরিক জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।